তওবা করার নিয়ম

প্রশ্নঃ তাওবা- এস্তেগফার অর্থ কি?
উত্তরঃ তাওবা অর্থ গুনাহ থেকে আনুগত্যের দিকে এবং গাফলত থেকে আল্লাহর স্মরণের দিকে ফিরে আসা। আর এস্তেগফার অর্থ ক্ষমা চাওয়া। (দেখুনঃ বেহেশতী যেওর, আহকামে যিন্দেগী)

প্রশ্নঃ তাওবা-এস্তেগফার এর তাৎপর্য কি?
উত্তরঃ তাওবা একটি অনিবার্য ইবাদত। তাওবার বরকতে সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যে কোন মানুষ যখন নিজের জীবন সম্পর্কে চিন্তা করবে সে লক্ষ্য করবে সব সময়ই কোন না কোন পাপ সে করছে। তাই তাওবা করা সর্বদাই জরুরী। তাওবা করার পদ্ধতি হল, কুরআন ও হাদীসে ব্যাপারে যে সব ভয়াবহ শাস্তির কথা আলোচিত হয়েছে সে সব শাস্তির কথা স্মরণ করবে। তাতে অন্তরটা গলে যাবে অন্তরে ব্যথার সৃষ্টি হবে। তখন মুখেও তাওবা করতে হবে। যেসব নামায কাযা হয়ে গেছে সেগুলো আদায় করে নিতে হবে। কারও হক নষ্ট করে থাকলে সম্ভব হলে তা আদায় করে নেবে। নইলে ক্ষমা চেয়ে নেবে। আর অন্যসব অপরাধের জন্য খুব কান্নাকাটি করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইবে। (বেহেশতী যেওর, আহকামে যিন্দেগী)

প্রশ্নঃ প্রত্যেক বান্দার জন্য তাওবা-এস্তেগফার করার হুকুম কি?
উত্তরঃ প্রত্যেক বান্দার উপর তার পাপ থেকে তওবা-এস্তেগফার করা ওয়াজিব। (আহকামে যিন্দেগী)

প্রশ্নঃ তাওবার জন্য মোট কয়টি কাজ করতে হবে?
উত্তরঃ তওবার জন্য মোট পাঁচটি কাজ করতে হবেঃ
১) খাঁটি অন্তরে তওবা করতে হবে। অর্থাৎ- শুধুমাত্র আল্লাহর আযাবের ভয় ও তাঁর নির্দেশের মহত্বকে সামনে রেখে তওবা করতে হবে।
২) অতীত পাপের প্রতি অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩) উক্ত পাপ থেকে এখনই বিরত হতে হবে।
৪) আল্লাহর হক বা বান্দার হক নষ্ট হয়ে থাকলে তার সংশোধন ও প্রতিকার করতে হবে। যেমন- নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি আল্লাহর হক, আদায় না করে থাকলে তা আদায় করতে হবে।
৫) আর বান্দার হকের মধ্যে হকদারের নিকট বা তার মৃত্যু হয়ে থাকলে তার উত্তরাধিকারীর নিকট ফেরত দিতে হবে। তা সম্ভব না হলে তাদের থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। আর অর্থ সম্পদ ব্যতীত অন্য কোন হক নষ্ট করে থকলে যেমন- গীবত বা গালিগালাজ করে থাকলে বা মুখে কিংবা কথায় কষ্ট দিয়ে থাকলে তার থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। কোন ফিতনার আশংকা না থাকলে উক্ত অন্যায় উল্লেখ পূর্বক ক্ষমা চাইতে হবে, অণ্যথায় অন্যায় উল্লেখ করা ছাড়াই ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। তার মধ্যেও ফেতনার আশংকা থকলে শুধু আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে। নেক কাজ করবে এবং দান সদকা করবে। আর হকদার ব্যক্তি মৃত হলে তার উদ্দেশ্যে কিছু সদকা করে দিবে। (আহকামে যিন্দেগী)

প্রশ্নঃ শুধু মুখে তওবার বাক্য আওড়ানোর দ্বারা কি তওবা পূর্ণ হবে?
উত্তরঃ উপরোল্লিখিত পাঁচটি বিষয় পূর্ণ করা ব্যতীত শুধু গতানুগতিক ভাবে মুখে তওবা/এস্তেগফারের বাক্য আওড়ালেই তওবা হয়ে যায় না। যদিও শুধু তওবার বাক্য মুখে আওড়ানোটাও একেবারে  ফায়দা থেকে খালি না। (আহকামে যিন্দেগী)

প্রশ্নঃ তওবার জন্য কি অযু জরুরি? একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি কলামে লেখা হয়েছে, ‘গ্রামের প্রচলিত বিশ্বাস, তওবা পড়ানো হলে রোগীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। তওবা পড়ানোর জন্য মুন্সী আনা হল। সাফিয়া বিবি বললেন, না গো! আমি তওবার মধ্যে নাই। তওবা করতে হইলে অযু করা লাগবে। শইল্যে পানিই ছোঁয়াতে পারি না, অযু ক্যামনে করব। সাফিয়া বিবির মনে হয়তো ভয় ঢুকে গিয়েছিল, তওবা মানেই মৃত্যু। তিনি মৃত্যু চান না।

কলামটির উদ্ধৃত অংশে কয়েকটি ধারণার উল্লেখ রয়েছেঃ
১) তাওবা করলে রোগীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ধারণা। ইতিপূর্বে এ বিভাগে এ সম্পর্কে লেখা হয়েছে। ঐ লেখায় বলা হয়েছিল যে, তওবা মানে জীবনের অবসান নয়; বরং তওবা মানে গোনাহমুক্ত নতুন জীবন লাভ।
২) তওবার জন্য অযু লাগে। এটিও ভুল ধারণা।
৩) তওবা নিজে করার বিষয় নয়; বরং এর জন্য মুন্সী ডাকতে হয়। এই ভুল ধারণাগুলোর মূল কারণ অজ্ঞতা ও জাহালত। তওবা কাকে বলে তা জানা থাকলে এইসব ভিত্তিহীন ধারণা সৃষ্টি হয় না। এখানে তওবা সম্পর্কে কিছু কথা বলা হল। তওবা মানে গোনাহ ত্যাগ করে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসা এবং অন্তর থেকে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তওবা হল আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন। বান্দার যখন গোনাহ হয়ে যায় তখন তার কর্তব্য, আল্লাহর কাছে তওবা-ইস্তিগফার করা।

অপরাধটি হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক সম্পর্কিত হলে চারটি কাজ করতে হবে। তাহলে তওবা পূর্ণাঙ্গ হবেঃ
১) গোনাহ ছেড়ে দেওয়া।
২) লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া।
৩) ভবিষ্যতে এই ধরনের গোনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
৪) কোনো ফরয-ওয়াজিব ছুটে গিয়ে থাকলে মাসআলা অনুযায়ী তার কাযা-কাফফারা আদায় করা। আর অপরাধটি যদি হয় হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক সংক্রান্ত তাহলে আরো একটি কাজ করতে হবে। যার হক্ব নষ্ট করা হয়েছে তার হক্ব আদায় করে কিংবা ক্ষমাগ্রহণ করে দায়মুক্ত হওয়া। এভাবে আল্লাহর কাছে নিজের কৃতকর্মের জন্য কান্নাকাটি ও অনুতাপের অশ্রু ফেলার নামই তওবা। আল্লাহর দরবারে রোনাজারি ও ক্ষমাপ্রার্থনা নিজের ভাষায়ও করা যায়। তেমনি হাদীস শরীফে তাওবা-ইস্তিগফারের যে দুআগুলো আছে সেগুলো পড়েও তওবা-ইস্তিগফার করা যায়।

এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে যে কথাগুলো বোঝা যায়, তা এই -
১) তওবা করা তারই দায়িত্ব, যে গোনাহ করেছে। নিজের গোনাহর জন্য নিজেকেই অনুতপ্ত হতে হবে এবং আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। যদিও আল্লাহর কোনো নেক বান্দার কাছ থেকে তওবা-ইস্তিগফারের নিয়ম জেনে নিয়ে তার বলে দেওয়া শব্দ উচ্চারণ করেও তওবা করা যায়, কিন্তু তওবার জন্য এটা জরুরি নয়। তাই তওবা নিজে করা যাবে না, কারো মাধ্যমেই করাতে হবে এই ধারণা ঠিক নয়। তদ্রূপ তওবার ক্ষেত্রে উল্লেখিত শর্তগুলো পালন না করে শুধু কারও বলে দেওয়া তওবার বাক্যগুলো উচ্চারণ করলেই তওবা হয়ে যায় না। তওবা হল মুমিন-জীবনের সার্বক্ষণিক আমল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও দিনে সত্তর থেকে একশত বার ইস্তিগফার করতেন বলে হাদীসে এসেছে।

২) আরো বুঝা গেল যে, তওবার জন্য অযু অপরিহার্য নয়। তবে কেউ যদি সালাতুত তাওবা বা তওবার নামা আদায় করতে চায়, তাহলে অন্যান্য নামাযের মতোই তাকে অযু করতে হবে। এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কেউ কোনো গুনাহ করে ফেলে অতপর পূর্ণ পবিত্রতা অর্জন করে নামাযে দাঁড়ায় এবং আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফ চায় তাহলে আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করে দিবেন। অতপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন মজীদের আয়াত তিলাওয়াত করলেন, (তরজমা) ‘এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনো কোনো মন্দ কাজ করে ফেললে বা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের গোনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর কে আছে আল্লাহ ছাড়া, যে গোনাহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা জেনেশুনে তাঁদের কৃত-কর্মের উপর অবিচল থাকে না। (সূরা আল ইমরান-১৩৫, জামে তিরমিযী হাদীস-৩০০৬, সুনানে আবু দাউদ হাদীস-১৫২১, সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস-১৩৯৫)

তবে সাধারণ তওবার জন্য অযু জরুরি নয়। অতএব তওবাকে মৃত্যু মনে করা, অযু ছাড়া তওবা হয় না কিংবা অন্যের সহযোগিতা অপরিহার্য ইত্যাদি হচ্ছে কিছু ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন ধারণা। তওবা কী তা জানা থাকলে এ জাতীয় ভুল ধারণা সৃষ্টি হবে না ইনশাআল্লাহ।

তওবার নিয়মঃ
) পাপ কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবো – এ রকম হলে তওবা হবে না।
) অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে তাঁর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
) অন্তরে ঐকাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
) লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহ খাতার জন্য “ইস্তিগফার” করতে হবে (মাফ চাইতে হবে) + “তওবা” করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)
) কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক্ক ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেইভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। উল্লেখ্য, তওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না করলে তিনি মাফ করবেন না।
) অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম – অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তওবা কবুল করবেন।
) তওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
) যে পাপ কাজ থেকে তওবা করা হলো (সমস্ত পাপ কাজ থেকেই তওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে সাথে সাথে আবার তওবা করে সেটা থেকে ফিরে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সাথে সাথেই তওবা করতে হবে, মৃত্যু পর্যন্ত। গোনাহ হ’তে মুক্তি লাভের আশায় কৃত পাপগুলো স্মরণ করে আল্লাহর নিকট একনিষ্ঠচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করবে (তাহরীম ৮) রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘বান্দা কোন পাপ করে ফেললে যদি সুন্দরভাবে ওযূ করে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করে আল্লাহর নিকট বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহ’লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন’ (আবূদাঊদ হাদীস-১৫২৩)

তবে তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে-
১) একমাত্র আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই তওবা করতে হবে।
২) কৃত গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে
৩) পুনরায় সে গোনাহে জড়িত না হওয়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে।

উল্লেখ্য, যদি পাপটি বান্দার সাথে যুক্ত থাকে, তাহ’লে উপরের তিনটি শর্ত পূরণের সাথে চতুর্থ শর্ত হিসাবে তাকে বান্দার নিকটে ক্ষমা চাইতে হবে ও তাকে খুশী করতে হবে। নইলে তার তওবা শুদ্ধ হবে না’ (নববী, রিয়াযুছ ছালেহীন, ‘তওবা’ অনুচ্ছেদ)তওবার জন্য বেশী বেশী পাঠ করতে হবে ‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম ওয়া আতূবু ইলাইহে’ (আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি) (তিরমিযী, আবু দাঊদ, মিশকাত হাদীস-২৩৫৩)

তওবাঃ
আর যে ব্যক্তি মন থেকে ক্ষমা চায় তাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তাই সে তওবা করায় এখন আর কিন্তু পাপী নয়। তাই তার সাথে ভাল ব্যবহার করা উচিত। তাকে কষ্ট দেয়া উচিত হবে না। না কথায় না আচরণে। আল্লাহ তাআলা আপনার মনের অবস্থাকে পরিবর্তন করে দিন। নিয়মিত নামায পড়ুন। নামাযের পর দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য দুআ করুন। আর এসব বিষয়কে একদম ভুলে যেতে চেষ্টা করুন। কোনভাবেই এসব পাপের কথা কারো কাছে বলবেন ন। কখনো আলোচনাও করবেন না। বাড়িতে ধর্মীয় বই রাখুন। বিশেষ করে আশরাফ আলী থানবী রহঃ ও হাকীম আখতার রহঃ এর লিখিত তাসাওউফ সংক্রান্ত কিতাবগুলো কিনে আনুন। আপনিও পড়ুন। আপনার স্ত্রীকে পড়তে দিন। ইনশাআল্লাহ দ্বীনী সমঝ হলে এ সমস্যা থাকবে না। আমরা মন থেকে আপনার পরিবারের জন্য দুআ করি। আল্লাহ তাআলা আপনাকে ধৈর্যধারণের তৌফিক দান করুন। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আপনার স্ত্রীকেও একজন খোদাভীরু বান্দা হিসেবে কবুল করুন।

হাদীসে এসেছে- عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ যরত আব্দুল্লা বিন মাসঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূ(সাঃ) ইরশাদ করেছেন, গুনাহ থেকে তওবাকারী সেই ব্যক্তির মত যার কোন গোনাহ নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০)

عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يلج النار رجل بكي من خشية الله حتى يعود اللبن في الضرع ولا يجتمع غبار في سبيل الله ودخان جنهم যরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে সে ব্যক্তিকে (জাহান্নামের) অগ্নি স্পর্শ করা সম্ভব নয় যদিও দোহনকৃত দুধ উলানে ফিরানো সম্ভব হয়। আর জাহান্নামের ধোঁয়া এবং আল্লাহর পথে (চলার কারণে) উড়ন্ত ধুলি কখনো একসাথে হতে পারেনা। (নাসায়ী শরীফ হাদিস নং-৩১০৮, সুনানে তিরমিযী হাদিস নং-১৬৩৩, ২৩১১, সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং-৪২৭)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ» أَوْ قَالَ: «غَيْرَهُ যরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিনা নারীকে শত্রু মনে না করে। কেননা, সে তার এক কাজকে না পছন্দ করলে তার অপর কাজকে পছন্দ করবে। (মুসলিম হাদীস নং-১৪৬৯)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خلقا، وخياركم خياركم لنسائهمহযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে পূর্ণতর মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আচার আচারণ উত্তম। আর তোমাদের মাঝে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীদের কাছে উত্তম। (সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস নং-৪১৭৬)

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا، أَحْسَنَهُمْ خُلُقًا، وَأَلْطَفَهُمْ بِأَهْلِهِ যরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মাঝে সেই ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল এবং অনুগ্রহশীল। (মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং-২৪২০৪, তিরমিজী হাদীস নং-২৬১২)

তওবা কবুল হয়েছে কিনা বোঝার উপায়ঃ
অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেনঃ কারো যদি তওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয় অর্থা পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে – তার তওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। কিন্তু কারো যদি এমন না হয় অর্থাৎ, তওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার তওবাতে ত্রুটি আছে। তার উচিত হতাশনা হয়ে – বার বার আন্তরিকতার সাথে খালেস নিয়তে তওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আন্তরিক তওবা করার তওফিক দান করুন।

কি দুয়া পড়ে তওবা করতে হবে?
যেই দোয়া পড়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তওবা করতেন ও আমাদেরকে পড়তে বলছেনঃ
উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যীমাল্লাযী লা- ইলা- হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি
অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোন যোগ্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছে তওবা করছি।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যেই ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয় অর্থাৎ সে যদি বড় রকমের গুনাহগার হয়, তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। (তিরমিযী ৪/৬৯, আবুদাঊদ ২/৮৫, মিশকাত হা/২৩৫৩, হাদীসটি সহীহঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন