মিম্বর তৈরী ও বসে বয়ান করা

মসজিদে মিম্বর ও মেহরাব তৈরীঃ
মুছল্লীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় এমন কিছু মসজিদের দেয়ালে বা মেহরাবে লাগানো যাবে না। ছালাতের সময় এগুলি চোখে পড়লে ছালাতের একাগ্রতা নষ্ট হয়।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এমন একটি চাদরে ছালাত আদায় করেন যাতে বুটা ছিল। তিনি তার বুটার দিকে একবার নযর করলেন। তিনি ছালাত শেষে বললেন, আমার এ চাদরটি এর প্রদানকারী আবু জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং আমার জন্য তার ‘আম্বেজানীয়া’ চাদর নিয়ে আস। কেননা এখনই এ চাদর আমার ছালাতের একাগ্রতা নষ্ট করল (বুখারী, মুসিলম, মিশকাত হা/৭০১)

আনাস (রাঃ) বলেন, আয়েশা (রাঃ)-এর একটি পর্দা ছিল, যা দ্বারা তিনি ঘরের একদিক ঢেকে রেখেছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমার এ পর্দা সরিয়ে ফেল। কারণ তার ছবি সমূহ আমার ছালাতের মাঝে আমার চোখে পড়ে (বুখারী মিশকাত হা/৭০২)

ইমাম বুখারী রহঃ তার বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৭১নং পৃষ্ঠায় হযরত সালমা বিন আকওয়া রাঃ থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। যার শব্দ হল- ﻋَﻦْ ﺳَﻠَﻤَﺔَ، ﻗَﺎﻝَ : « ﻛَﺎﻥَ ﺟِﺪَﺍﺭُ ﺍﻟﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻤِﻨْﺒَﺮِ ﻣَﺎ ﻛَﺎﺩَﺕِﺍﻟﺸَّﺎﺓُ ﺗَﺠُﻮﺯُﻫَﺎ » হযরত সালামা থেকে বর্ণিতরাসূল সাঃএর মসজিদে নববীর [কিবলার] দেয়াল এবং মিম্বরের মাঝে এতটুকু দূরত্ব ছিল যে, একটি বকরী অতিক্রম করতে পারতো। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৯৭)

এ হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গায়রে মুকাল্লিদ ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ “হাদীস দ্বারা একথা জানা যাচ্ছে যে, মসজিদের মেহরাব এবং মেম্বর বানানো সুন্নত নয়। মেহরাবতো একেবারে না’ই হওয়া উচিত। আর কাঠের মিম্বরও আলাদা করে রাখা উচিত। আমাদের জমানায় এটি ছড়িয়ে গেছে যে, মসজিদে মেহরাব ও মিম্বর চুনি শুরকি দিয়ে বানায়। (তাইসীরুল বারী-১/৩৪২)

বুখারী শরীফের হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রাসূল সাঃ এর জমানায় মসজিদের মেহরাব ছিলনা। আর অহীদুজ্জামান সাহেবের ব্যাখ্যা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মেহরাব বানানো গায়রে মাসনূন তথা সুন্নতের খেলাফ। আরেকটু বেড়ে গায়রে মুকাল্লিদ মাওলানা আব্দুস সাত্তার সাহেবের মতে মেহরাব বানানো নাজায়েজ ও বিদআত। (ফাতাওয়া সেতারিয়া-১/৬৩)

মসজিদে নিদ্দিষ্ট করে জায়গা দখল বিষয়েঃ
কিছু লোক আছেন যারা নামাজ পড়তে আসেন মসজিদে। কিন্তু তারা প্রতিদিন এক জায়গায় বসার চেষ্টা করেন। তিনি যদি আগে আসেন তাহলে ওই নির্দিষ্ট জায়গায় বসেন আর যদি পরে আসেন তা হলে যেভাবে হোক লোকের ঘাড় ডিঙিয়ে অন্যজনের অসুবিধা করে হলেও নির্দিষ্ট জায়গায় বসার চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে কাঙ্ক্ষিত স্থান সাধারণত পাখা বরাবর হয়ে থাকে। আবার কোথাও দেখা গেছে অভিজাত কারো জন্য বা সমাজের কর্তা ব্যক্তির জন্যও মসজিদের জায়গা নির্দিষ্ট থাকে (নাউজুবিল্লাহ)

এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ যা আল্লাহ’র রাসুল (সাঃ) পছন্দ করেননি। মসজিদে যিনি আগে আসবেন তিনিই অধিক হকদার ইচ্ছামত জায়গায় বসার। আর পরে এলে মসজিদে পেছনের দিকে বসতে হবে।

হযরত আবু কুরাইব (রাঃ) হযরত মুয়ায ইবন আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহ’র রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম’আর দিনে লোকের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে অগ্রসর হয়কিয়ামতের দিন তাকে দোজখের পুল বানানো হবে। (ইবন মাজাহ হাদিস নম্বর-১১১৬)

আল্লাহ’র রাসুলের (সাঃ) সতর্ক বাণীর পর আশা করি আমরা মসজিদে পরে নামাজ পড়তে এসে আর কখনো লোকের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে যাবো না। আসুন আগের ভুলের জন্য আমরা আল্লাহ’র কাছে তওবা করি। আশা করি আল্লাহ রব্বুল আ’লামিন আমাদের ক্ষমা করবেন। এরপর কিছু লোক যদি লাল বাতি জ্বলে (লাল বাতি জ্বলার অর্থ সুন্নত পড়ার সময় নেই, কিছুক্ষণের মধ্যেই জামাতের ইকামত দেওয়া হবে।) বা না জ্বলে এতো দ্রুত সুন্নত নামাজ আদায় করেন তা আশ্চর্যের বিষয়। রুকু সেজদা সঠিকভাবে না করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না।

হযরত আবু মসউদ আনসারী (রঃ) হতে বর্ণিতআল্লাহ’র রসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রুকু ও সেজদায় পিঠ স্থিরভাবে সোজা করে না তার নামাজ শুদ্ধ হয় না। (তিরমিজি ১ম খণ্ড, হাদিস নম্বর-২৫০)

নামাজের মধ্যে ধীরস্থিরতা নামাজের অন্যতম শর্ত। দ্রুত সেজদা দেওয়াকে আল্লাহ’র রাসুল (সাঃ) কাকের ঠোকরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ খেয়াল করলে দেখবেন কাক খুব দ্রুততার সঙ্গে ঠোকর দিয়ে খাবার সাবাড় করে। এছাড়া সেজদায় কনুইসহ হাতের তালু বিছিয়ে দিয়ে সেজদা দিতে আল্লাহ’র রাসুল (সাঃ) স্পষ্ট নিষেধ করেছেন। কারণ এভাবে চতুষ্পদ হিংস্র জন্তু বসে।

হযরত আব্দুর রহমান ইবন সিবল (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহ’র রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কাকের ঠোকরের ন্যায় (অর্থাৎ তাড়াতাড়ি) সেজদা করতেচতুষ্পদ জন্তুর মতো বাহু বিছাতে এবং মসজিদের মধ্যে উটের মতো নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিতে নিষেধ করেছেন (দাউদ শরীফহাদিস নম্বর-৮৬২, ইবন মাজাহ হাদিস নম্বর-১৪২৯)

মহান আল্লাহ্‌ রুকু সেজদায় আমদের যে ত্রুটি হয়েছে সে জন্য আমাদের ক্ষমা করুন। নামাজে ধীর স্থির হয়ে রুকু সেজদা করে এবং ভবিষ্যতে তা সঠিকভাবে করার তৌফিক দান করুন এবং রাসুলের (সাঃ) ওই হাদিস অনুসারে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

রুকু সেজদা ঠিকভাবে করা এবং নামাজে একাগ্রতা ও নামাজের শুদ্ধতা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আল্লাহ’র রাসুল (সাঃ) একটি ঘটনায় পাওয়া যায়। কোনো এক লোককে তিনি পর পর তিন বার নামাজের নির্দেশ দিয়েও যখন নামাজ সঠিক পেলেন না, তখন তিনি নিজেই কিভাবে শুদ্ধভাবে নামাজ পড়তে হবে তা তাকে শিখিয়ে দিলেন।

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহ’র রাসুল (সাঃ) মসজিদের এক কিনারায় বসেছিলেন। এক ব্যক্তি মসজিদে এসে নামাজ পড়তে শুরু করলো। নবী (সাঃ) তার নামাজের প্রতি লক্ষ্য করছিলেন লোকটি নামাজের রুকু ও সেজদা ভালো করে ধীরে ধীরে আদায় করছিল না। লোকটি নামাজ শেষ করে নবী (সাঃ) এর কাছে এল এবং তাঁকে সালাম করলো। নবী (সাঃ) তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন তোমার নামাজ হয়নি, তুমি পুনরায় নামাজ পড়ে আস। লোকটি দ্বিতীয়বার নামাজ পড়লো (কিন্তু প্রথম বারের মতোই পড়লো এবং নবী (সাঃ) এর কাছে এসে সালাম করলো। এবারও তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তোমার নামাজ হয়নি, তুমি পুনরায় নামাজ পড়ে আস। সে এবারও একইভাবে নামাজ পড়লো। হযরত নবী (সাঃ) তাকে একইভাবে বললেন। তিনবার এমন করার পর লোকটি আরজ করলো, হুজুর! যে আল্লাহ্‌ আপনাকে সত্য ধর্মের বাহকরূপে রাসুল বানিয়ে পাঠিয়েছেন সে আল্লাহ’র শপথ করে আমি বলছি, আমি এর চেয়ে উত্তমরূপে নামাজ পড়তে জানি না। আপনি আমাকে নামাজ পড়া শিখিয়ে দিন। অতঃপর নবী (সাঃ) তাকে নামাজ শিক্ষা দিতে লাগলেন। তিনি বললেন, নামাজের আগে উত্তম রূপে ওজু করবে, তারপর কেবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াবে, তারপর “আল্লাহু আকবর” বলবে। অতঃপর কোরআনের যা কিছু সূরা পড়া তোমার পক্ষে সহজ ও সম্ভব হয় তা পড়বে। তারপর আল্লাহু আকবর” বলে মাথা ঝুকাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে। তারপর “ছামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলে পূর্ণ মাত্রায় সোজা হয়ে দাঁড়াবে। যেন প্রতিটি হাড় নিজ নিজ স্থানে পৌঁছাতে পারে। অতঃপর “আল্লাহু আকবর” বলে ধীরস্থিরভাবে উত্তমরূপে সেজদা করবে। তারপর মাথা উঠিয়ে স্থিরভাবে বসবে। পুনরায় ঐরূপ সেজদা করবে এবং সেজদা থেকে উঠবে। এরূপে (ধীরস্থিরভাবে ভক্তি ও মহব্বতের সঙ্গে) প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নামাজ আদায় করবে। (বোখারি শরীফ,খণ্ড-১, হাদিস নম্বর-৪৬০)

এটাই আল্লাহ্‌র রাসুলের (সাঃ) দেওয়া নামাজ পড়ার শুদ্ধ ও সঠিক নির্দেশনা। নামাজ মুমিনের জন্য মিরাজ স্বরূপ। মিরাজে মহান আল্লাহ্‌ যেমন তার প্রিয় হাবিবের সঙ্গে একান্তে আলাপ করেছিলেন তেমনি নামাজের মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে মহান আল্লাহ’র একান্ত আলাপ হয়। বান্দা তার অভাব অভিযোগ সরাসরি আল্লাহ’র কাছে পেশ করে এবং সঠিক বিনয়ী নামাজ আল্লাহ’র দরবারে গৃহীত হয়ে থাকে। বান্দাকে তার প্রয়োজন আল্লাহ’র কাছেই বলতে হয় কোনো মাধ্যম ছাড়া। আর সে পদ্ধতি হচ্ছে নামাজ।

হযরত আওফ ইবন মালিক আশজায়ী (রাঃ) হতে বর্ণিত, আমরা রাসুল (সাঃ) এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন তোমরা কি আল্লাহ’র রাসুলের (সাঃ) কাছে বায়াত হবে না? এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। আমরা হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং তাঁর কাছে বায়াত হলাম। তারপর আমরা বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা তো আগেই আপনার কাছে বায়াত হয়েছি, তবে এই বায়াত কোন বিষয়ের ওপর? তিনি বললেন, এই বায়াত এই কথার ওপর যে, তোমরা আল্লাহ’র ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে। তারপর আস্তে আস্তে করে গোপনে বললেন- মানুষের কাছে কিছু চাইবে না। (নাসাই শরীফ হাদিস নম্বর-৪৬৩)

প্রশ্ন হচ্ছেঃ মসজিদে মিম্বর ও মেহরাব তৈরী করাই হাদিসে নিষেধ সেখানে আপনি মেহরাব বানালেন কোন হাদিসের রেফারেন্সে দলিল বলুন?

দ্বিতীয় কথা হচ্ছেঃ মসজিদ আল্লাহর ঘর হাদিসে জায়গা দখল করে রাখা যাবে না বলা আছে খুব শক্তভাবে তাহলে মেহেরাবের জায়গা আপনি কেন দখল করে রেখেছেন? যেখানে বসে আপনি ছাড়া অন্য কেউ বয়ান করতে পারবেনা কেন ছহি হাদিসের আলোকে জবাব দিন?

রাসূল (সাঃ) দ্বীন আপনার একার উপর ফরজ না সবার উপর ফরজ? আপনার অনুপস্থিতে যদি অন্য কেউ ইমামতি করতে পারে মেহরাবে বসতে পারে না কেন? উটাকি আপনি কিনে নিয়েছেন? আর কেনা সম্পত্তি মসজিদে কেন? এটাতো আল্লাহর ঘর?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন